মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৯

এক ডেসটিনি কোটিপতি বন্ধুর গল্প!!!!

আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে জব করছি সাথে B.S.C Engineering a পড়ছি। একদিন হঠাৎই ছুটি পেয়ে গেলাম। সাথে আরও কয়েকদিন ছুটি নিয়ে বাড়ী গেলাম। অনেক দিন পর মনের মতো একটা ডিজিটাল ক্যামেরা নিলাম। উদ্দেশ্য এবার ভালো ভালো কিছু ছবি তুলবো। ফটোগ্রাফির শখ বা নেশা আমার অনেকদিনের। যাই হোক, যাওয়ার আগের দিন ফোন দিলাম এক পুরোনো ফ্রেন্ডকে যাতে আমাকে একটু সময় দেয়। সে আমার স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড ছিল।ফ্রেন্ডদের বেশীর ভাগই থাকে ঢাকাতে। তাদের সাথে অকেশনালী দেখা হয়। কথা বলে মনে হলো সে খুশিই হলো আমার আসার কথা শুনে।বাড়ী যাওয়ার পরদিন সকালে তার ফোন পেলাম। আমি তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেলাম কিছু ছবি তোলার নেশায়। যথারীতি সেখানে গিয়ে দেখলাম সে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। ঠিক কেন জানি হিসেব মিলাতে পারছিলামনা। যে কিনা বছরে একটা ফোন দেয়না সে কেন...???

ভুলটা ভাঙ্গতে খুব বেশী দেরী হয়নি। যেখানে দেখা করলাম সে তার কাছাকাছি একটা বিল্ডিং এর ২য় তলায় নিয়ে গেল। বুঝতে পারলাম আমি ডেসটিনির শাখা অফিসে ঢুকেছি। সে আমাকে খুব অনুরোধ করে বলল ” দোস্ত তুই আমাকে জাস্ট ৪৫ মিনিট সময় দিবি। যদিও সে আগে কোন প্রোগাম দেয়নি। মনে মনে বল্লাম ব্যাটা......তুই আর আমাকে কি শিখাবি? এসব তোর আগে পার করে আসছি।...এর পর চলল বকর...বকর....বকর..........অফফফফফফফফ....আমি শুধু মাথা নেড়ে সাই দিয়ে যাচ্ছি আর ভাবছি কবে শেষ হবে এই বকবকানী????



উল্লেখ্য, আমি যখন থেকেই শহরে এসেছি তখন থেকেই এ ধরণের অনেক এম.এল.এম কোম্পানী তে আমার যাওয়া হয়েছে ঠিক এরকম কিছু ফ্রেন্ডদের মাধ্যমে। তারপর অপেক্ষা করেছি অনেকদিন, তাদের আসলেই কি অবস্থা তা জানার জন্য...কারণ আমার মনে হয়েছে তারা আমাদেরকে যা বলে বা বোঝায় আসলে তারা তা নিজেরাও বিশ্বাস করেনা। সময়ের ব্যবধানে দেখেছি তাদেও হতাশা। অনেকে অনুরোধ করে নিষেধ করেছে যাতে এসব কোম্পানীর ফাঁদে পা না দেই!!! এখানে নাকি অনেক ফাঁকফোকর থাকে। তারা যেভাবে সহজে টাকা আয়ের লোভ দেখায় সেটা যদি সত্য হতো তাহলে মানুষ আর এত কস্ট করে আয় রোজগার করতো না । সব চেয়ে অবাক লেগেছে, যখন তারা বলে, কোম্পানীতে এড হতে হলে এত... হাজার টাকা লাগবে। যখন বলি, যে এত টাকা একসাথে এখন দিতে পারবনা।...ওরা তখন পরামর্শ দেয়, ঘরের কিছু বিক্রি করতে, বাবার পকেট মারতে!!!!  আমি সত্যিই তাদেও সাধারণ কমনসেন্স নিয়ে সংকিত!!!...শুধু তাদের ব্যবসার র্স্বার্থে তারা এত নিচে নামতে পারে? এত ছেছড়াামি করতে পারে???

অথচ যদি বলি, যে যেহেতু আমার কাছে এখন নাই, তোর থেকেই দিয়ে দে, দু মাস পরেই তো পেয়ে যাবি যেহেতু আমি অনেক টাকা ইনকাম করব তার দেখানো উপায়েই। খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি এ ব্যাপারে তার কোন সাড়া শব্দ নাই!!!
সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার, যখন খুব ভিতরের কিছু প্রশ্ন করেছি যা হয়তো সে তাদেও সেমিনারে পায়নি তখন সে কথাটা পাশ কাটিয়ে গেল, সে বক বক করেই যাচ্ছে। আমি আমার প্রশ্নের যর্থাথ উত্তর খুঁজে পাইনি। এমনকি সামান্য এ ব্যাপারটা নিয়ে!সে আমার প্রফেশন নিয়ে কটাক্ষ করতে পিচপা হয়নি!!!। আমার একমাসের আয় নাকি সে এক সপ্তাহে করে!!! ভাল কথা, আমার চেয়ে কে কত টাকা আয় করে তা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা ছিলওনা, থাকবেওনা। শুধু মাথাব্যাথা এ ব্যাপারটা নিয়ে যে আমি যা আয় করছি তা সৎ উপায়ে করছিতো? আমি বসে বসে এক পয়সাও আয় করতে চাইনা। আমি পরিশ্রম করে আয় করতে চাই।সুতরাং আমি তাদেও দেখানো পথে হাটিনি। হাটতে ও চাইনা। আমার তখনই বোঝা হয়ে গিয়েছিল তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কি!!!!...যদি তুই এত বড় ব্যবসায়ীই হয়ে থাকিস তো আমার পিছনে ঘুরছিস কেন??? 
উত্তরটা আমার জানা। কারণ তার যে যোগ্যতা তাতে সে এসব ছাড়া অন্যকিছু করতে পারবে তা অন্তত আমি মনে করিনা। অন্যদিকে, আমি ফ্যামিলীর লাখ লাখ টাকা খরচ কওে ইন্জিনিয়ার হয়েছি। আমার কোম্পানী আমাকে চেহারা দেখে দেখে টাকা দিচ্ছেনা, কোম্পানীর দামী গাড়ী দিচ্ছেনা।আমি আমার যোগ্যতা দিয়ে আয় করছি, কেউ করুণা করছেনা আমাকে। সুতরাং আমার প্রফেশন নিয়ে মন্তব্য করা তার অনধিকার চর্চা ছাড়া কিছুই নয়। যারা ডেসটিনি বা অন্যান্য এম. এল. এম কোম্পানীতে আছেন তাদের বলছিৃ... দয়া করে আপনাদের কর্মীদের ভাল করে আদব-কায়দা শিখাবেন, যাতে কেউ এ ধরণের আচরন না করতে পারে। আপনারা আপনাদেও কোম্পানী নিয়ে যা খুশি বলতে পারেন কিন্তু কারও প্রফেশন নিয়ে কিছু বলার অধিকার কেউ আপনাদের কেউ দেয়নি।
৬৫ মিনিট ওভার হয়ে গেল বল্লাম, দেখ আমি কিছু ছবি তুলতে আসছিলাম। তখন সে বলল ..আরে এখন তো মেইন কথা শুরুই হয়নি!!!!!

আমি তার উপড় চরম বিরক্ত। বুঝতে পেরেও সে চালিয়ে যাচ্ছিল।... কিছুতেই তার এ বকবকানী থামছেনা। শেষে না পেরে উঠে দাড়ালাম। তারপর সেও বের হলো। তার পর কিছু ছবি তুলেই বিদায় নিলাম। বিকেলে আবার প্রোগাম নিলাম, কারণ একা একা তো আর ঘুরাঘুরি করা যাবেনা!!!


এরপর বিকেলে দেখা হলো, ছবি তুলা হলো কিছু। যখন চলে আসছিলাম তখন সে আবার আগের কথা তুলল।... ডেসটিনি কেমন লেগেছে? কখন ভর্তি হবি, এসব। আমি আগেই ওকে বলেছি যে এসব নিয়ে আমি মোটেও ইন্টারেসস্টেট না। তার পরও সে এ কথাটাকে পড়তেই দিচ্ছেনা।
হাঁটছি। হঠাৎ সে বলে উঠে , দোস্ত নাস্তা করা!!!!!...আমি বল্লাম, দেখ , আমি মাসে যা পাই, তুই তো আবার তা এক সপ্তাহে তা আয় করিস তাইনা? তো এ কাজটা তো তোর করা উচিত। সে বলল, আরে , আমি কি আর তোকে এত সস্তা জায়গায় নিবো? আমি বল্লাম, তো সস্তা জায়গাতো তোর জন্য কোন ব্যাপার না। কিন্তু সে কিছুতেই আমাকে খাওয়াবেনা। আমি তার এ মনোভাব বুঝতে পেরে বল্লাম, তোরা এত লাখ লাখ টাকা কামাই করিস, অথচ তোদের মন এত ছোট কেন? আমি তো জানি তোরা মুখে কোটিপতি, কিন্তু বাস্তবে ফকির। তোদের খালি চাপার জোরটাই আছে আর কিছু নাই। এর পর আমি ওকে এক প্রকার জোর করেই একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকালাম, বিলও দিলাম। আর বলে দিলাম , এত ছোট মন নিয়ে আর জীবনে কোনদিন লাখ লাখ টাকার গল্প অন্তত তুই আমার সামনে করবিনা!!!... তার পর থেকেই তার সাথে আমি আর কোন ধরণের সম্পর্ক রাখিনি। যে বন্ধু নিজের র্স্বাথে আরেক বন্ধুকে ছোট করতে পিচ পা হয়না, ও রকম বন্ধুর তো আমার দরকার নাই। তাছাড়া তার কোন যোগ্যতা নাই আমার বন্ধু হওয়ার- মনকে এই বলে স্বান্তনা দিয়েছি।

পরিশেষে বলতে চাই, কোন এম.এল.এম. কোম্পানী ভূয়া, ভাল, বা ঠকবাজ, এত কিছু আমার জানার বা বলার দরকার আছে বলে মনে করছিনা। শুধু বলতে চাচ্ছি, তারা যেন তাদের কাজেই সীমাবদ্ধ থাকে, তারা মুটিভেটেড করবে, তার পরের সিদ্ধান্ত আমাদের। তাই বলে আমরা যদি ভর্তি না হই, তাহলে সর্ম্পক খারাপ করবো কেন? কাউকে ছোট ও করবো কেন বা কারও ব্যাপারে অনধিকারও চর্চা করবো কেন?????? এসব ব্যাপারে সবাই একটু সচেতন হলেই হয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন